মর্গান হাউসে এখনও নাকি অতিথিদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন মৃত ‘লেডি’ মরগ্যান

  অনির্বাণ কুন্ডু, কালিম্পঙঃ   অনেকবার পাহাড়ের ডাকে সাড়া দিয়েছি। বলা ভাল, মাঝে মাঝেই মনটা কেমন পাহাড় পাহাড় করে। গড়পড়তা বাঙালির একটা অদ্ভুত ব...

 

অনির্বাণ কুন্ডু, কালিম্পঙঃ  অনেকবার পাহাড়ের ডাকে সাড়া দিয়েছি। বলা ভাল, মাঝে মাঝেই মনটা কেমন পাহাড় পাহাড় করে। গড়পড়তা বাঙালির একটা অদ্ভুত ব্যামো আছে। সে পাহাড় বলতেই বোঝে দার্জিলিং। আর সিকিম হলে গ্যাংটক। 

আরে বাবা, এর বাইরেও যে একটা বিরাট পাহাড় পড়ে আছে, সেটা কে বোঝায়!‌ কার্শিয়াং (Kurseong) বা কালিম্পংকে (Kalimpong) ঘিরে আশেপাশে কত ভাল ভাল জায়গা। সেখানে গড়পড়তা টুরিস্ট গেলই না। সে দার্জিলিং নিয়েই মেতে রইল।

কালিম্পং (Kalimpong) শহরটা কোনওবারেই তেমন ভাল লাগেনি। বড্ড ঘিঞ্জি। আশেপাশে অনেক ভাল জায়গা আছে। সেসব জায়গায় গিয়েছি, থেকেওছি। কিন্তু শহরটায় এলেই যেন একরাশ বিরক্তি। কিন্তু এবার আমাদের ঠিকানা হল সেই কালিম্পং (Kalimpong)। 

তবে শহরের ভিড় বা যানজট থেকে একটু অন্যদিকে, মর্গান হাউস (morgan house)।

পুরো গল্পটি দেখতে নীচের ভিডিও লিঙ্কে ক্লিক করুন

ভূত বাংলো (Haunted House) হিসেবে পরিচিতি আছে। গুগলে গিয়ে Hounted House সার্চ করলে একেবারে শুরুর দিকেই এই বাংলোটার (Morgan House) কথা পাবেন। নানা গল্প ছড়িয়ে আছে। যার অধিকাংশরই কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। কিন্তু লোকমুখে এমন কত লোকগাথা ছড়িয়ে যায়। গল্পের ডালপালা আর  কবে যুক্তি–‌বুদ্ধির সরণি বেয়ে হেঁটেছে!‌ তবে ভয়ের কোনও কারণ নেই। দুই রাতে আমরা অন্তত কোনও সাহেব ভূত বা বাঙালি ভূতের দেখা পাইনি।


অবশ্য মাঝরাতে বাংলোর লনে ঘুরে বেড়ানোর দুঃসাহসও দেখাইনি। কারণ, কোনও অ্যাডভেঞ্চার করতেও যাইনি, ভূতের ইন্টারভিউ নিতেও যাইনি। গিয়েছিলাম নিখাদ বেড়াতে। ফলে, দুঃসাহসটা কোয়ারেন্টিনে রেখেই গিয়েছিলাম। অনেক ভুল ধারণা ভেঙে গেল। 

যে কালিম্পংকে (Kalimpong) কিছুটা তাচ্ছিল্য করতাম, সেই কালিম্পং যেন নিজেকে অন্য চেহারায় ধরা দিল। এই কালিম্পংকে আগে তো কখনও দেখিনি। ঢুকতেই বিশাল এক লন। এখানে বসে শীতের রোদ গায়ে মেখেই অনায়াসে কাটিয়ে দেওয়া যায়। লনে চেয়ার, টেবিল পাতা। অর্থাৎ গা এলিয়ে আড্ডা দেওয়ার পটভূমি তৈরি করাই আছে। এছাড়াও নানা প্রান্তে পার্মানেন্ট বেঞ্চ লাগানো আছে।

ভেতরের সিঁড়ি থেকে মেঝে, সবই কাঠের। ফলে, অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ। আর ঘরটার তো তুলনা নেই। ছোটখাটো একটা ফুটবল মাঠ বলতে পারেন। অথচ, ভাড়া যে খুব বেশি, তাও নয়। দার্জিলিংয়ের (Darjeeling) বিভিন্ন ঘিঞ্জি হোটেলগুলোর ভাড়া আড়াই–‌তিন হাজার। অথচ, এখানে ১৮০০ বা ২১০০ টাকার ঘরগুলো যেন রাজকীয়। জানালার পর্দা সরালেই ধরা দেবে পাহাড়ের নানা চূড়া। মেঘ এসে ঢুকে পড়বে জানালা দিয়ে। পাশেই ছাদে গেলে ধরা দেবে পাহাড়ের অন্য দিকগুলো। 

টুরিস্টের আনাগোনা ভালই। ফলে, সাবেবি বাংলার লাগোয়া এলাকায় কিছু অ্যানেক্স কটেজ তৈরি হয়েছে। ঝাঁ চকচকে, অত্যাধুনিক। তবে, থাকতে হলে আদি মর্গান হাউসে (morgan house) থাকাই ভাল।

একটা পেল্লায় সাহেব বাংলো। বয়স নব্বই। দুরপিনদাঁড়া পাহাড়ের টঙে, সবুজে মোড়া লনের ওপর দাঁড়িয়ে রাজার মতো। সবুজ লনের চারপাশে নানা বাহারি ফুল। পায়রা বকবক বকম। আর লনের এককোণে গেলেই দেখা যাবে আকাশে বড় আয়েশ করে গা এলিয়ে শুয়ে রয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। বাংলোটাকে এড়িয়ে চারপাশে দেখতে দেখতে প্রেমের ঘোর লাগবে। তারপরে দুরুদুরু বুকে ফের যদি তাকান বাংলোর দিকে, ছ্যাঁত করে উঠবেই বুকটা। ভূতে বিশ্বাস করেন না, চারপাশে ঝকঝকে রোদ, লনে উল গায়ে কুকুরছানা খেলছে। তারপরেও ভয় করবে।

মরগ্যান হাউস এমনই। গেট ছাড়িয়ে ঢুকলেই মনে হবে একটা ভূতুড়ে পোড়ো বাড়ি। বাড়ির গা জুড়ে শিকড়-বাকড়, লতানে গাছের সারি। পাথুরে বাংলোটাকে যেন জড়িয়ে রেখেছে সবুজ। অথচ, এই বাংলোই কালিম্পঙের অন্যতম সেরা হোটেল। তাও আবার খোদ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সম্পত্তি। ভিতরে ঢুকলেই রাজকীয় বিলাসের আঁচ মিলবে। সাহেবি কেতার ‘ফায়ার প্লেস’, বড় বড় ঘর, উঁচু দেওয়াল, কাচের জানলা, দেওয়ালে পুরনো ছবি। প্রাথমিক ভয়টা কাটিয়ে বাইরে থেকে বাংলোকে দেখলেও মুগ্ধ হতে হবে। ব্রিটিশ কাঠামোর বাংলো। পাথুরে দেওয়াল। মনে হবে ব্রিটেনের কোনও কাউন্টিতে চলে এসে এসেছেন। তারপরেও অবশ্য ভয়টা কাটবে না। কারণ আপনি এতক্ষণে জেনে গেছেন, এই মরগ্যান হাউস ভারতের অন্যতম বিখ্যাত ‘ভূতুড়ে ঠিকানা’

১৯৩০ সালে এই সাধের বাংলো তৈরি করেছিলেন জর্জ মরগ্যান। পাটের ব্যবসা ছিল তাঁর। দেদার টাকা, ক্ষমতা-প্রতিপত্তিও মন্দ ছিল না। তখন তিন কিমি দূরের কালিম্পং শহর অনেকটাই আয়তনে ছোট।লোকজন কম, প্রকৃতি আরও উদার। এমন জায়গার প্রেমে না পড়ে থাকা যায়! মরগ্যান সাহেব স্ত্রীকে নিয়ে এসে উঠলেন এই বাংলোয়। গ্রীষ্মে তো বটেই, পারলে সারা বছরই কাটান এখানে। একসময় সাহেব মারা গেলেন, তাঁর প্রিয়তমাও চোখ বুজলেন। নিঃসন্তান দম্পতি কোনো উত্তরাধিকারী রেখে যেতে পারেননি। ফলে, এই বাংলো চলে এল ভারত সরকারের হাতে। ১৯৬২-তে প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু যখন অসুস্থ, ঠিক হল এই বাংলোটিকেই সরকারি রেস্ট হাউসে পরিণত করা হবে। নেহরুজিও থাকবেন, পাহাড়ি আবহাওয়ায় সেরেও উঠবেন দ্রুত। কিন্তু, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই নেহরুর মৃত্যু। 

অতঃপর, ১৯৭৫ সাল নাগাদ এই বাংলো পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দপ্তরের হাতে আসে। আর, এখন তো ‘মরগ্যান হাউস’ কালিম্পঙের অন্যতম বিখ্যাত হোটেল।

ভিডিও নির্মানঃ অনির্বাণ কুন্ডু ও সঞ্জয় কুমার দত্ত, ছবিঃ অনির্বাণ কুন্ডু ও গুগল 

BONG 24

COMMENTS

নাম

অজানা তথ্য,5,আন্তর্জাতিক,6,ছোটগল্প,2,ডিয়ার বেঙ্গল,23,বিনোদন,19,ব্লগSHOT,24,ভাগ্যলিপি,1,ভারতকথা,3,ভ্রমন কাহিনী,7,লাইফস্টাইল,16,সাম্প্রতিক,100,স্বাস্থ্য কথা,13,হ্যাংলা পেটুক,6,
ltr
item
Bong24.in: মর্গান হাউসে এখনও নাকি অতিথিদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন মৃত ‘লেডি’ মরগ্যান
মর্গান হাউসে এখনও নাকি অতিথিদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন মৃত ‘লেডি’ মরগ্যান
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi1XlaRhcXGkDpUG5Yjbss059ZMtIvC3BAOYn1p-cF6cKKNSUzQCK6GCYuF775kiW7RE0xt3nW_dh4_abM5MYS2uMNHNkqJgh3c8eWMalDFtB4JtSx4-hu23oQxwT_78NBbzUjIk8Sy0pBVlBJ2MyKy64qSqQbbuI2FpHdmOAWQHQ6WwGnXwGWbxg/s16000/BONG%2024.in.jpg
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi1XlaRhcXGkDpUG5Yjbss059ZMtIvC3BAOYn1p-cF6cKKNSUzQCK6GCYuF775kiW7RE0xt3nW_dh4_abM5MYS2uMNHNkqJgh3c8eWMalDFtB4JtSx4-hu23oQxwT_78NBbzUjIk8Sy0pBVlBJ2MyKy64qSqQbbuI2FpHdmOAWQHQ6WwGnXwGWbxg/s72-c/BONG%2024.in.jpg
Bong24.in
https://www.bong24.in/2022/08/morgan-house-kalimpong.html
https://www.bong24.in/
https://www.bong24.in/
https://www.bong24.in/2022/08/morgan-house-kalimpong.html
true
3543138551337409656
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy Table of Content