ব্রততী রায় শীল , বং 24: আমাদের মেয়েদের জীবনটা অনেকটা সাঁচে বানানো মাটির পাত্রের মতো! খুব শৌখিন কিন্তু ভীষণ নমণীয়! জীবনের বেশ কিছুটা ভাগ ...

ব্রততী রায় শীল, বং 24: আমাদের মেয়েদের জীবনটা অনেকটা সাঁচে বানানো মাটির পাত্রের মতো! খুব শৌখিন কিন্তু ভীষণ নমণীয়! জীবনের বেশ কিছুটা ভাগ আদরে ভালোবাসায় বড়ো হই,তারপর শুরু হয় ত্যাগ স্বীকার করার পরাজিত প্রতিযোগিতা,তুমি যতই চেষ্টা করো সফল কিছুতেই হতে পারবেনা,যত ওপরে উঠতে চাইবে ততো সমাজ পা টেনে নিচে নামিয়ে দেবে, তোমায় যে ছোটো থেকেই একই বুলি শেখানো হয়-“মেয়েদের এটা করতে নেই,ওটা করতে নেই,সেটা করতে নেই”

আর আমরাও মন্ত্রমুগ্ধের মতো টিয়া পাখির বুলি আউরে যাই ,ছোটো থেকেই লক্ষণ গন্ডির মধ্যে থাকতে শিখে যাই,বুঝে যাই নিজের সীমারেখা।
তবে জীবনের বেশ কিছুটা সময়ে আমাদের ইচ্ছে গুলো পূর্ণতা পায়,সব থেকে ভালো সব থেকে বড়ো জিনিসটা আমাদের জন্যেই বরাদ্দ থাকে,খুব সৌখিন ভাবে আদরে আবদারে আমাদেরকে প্রস্তুত করার হয় অজানা জগতে পাঠানোর জন্যে….

সেখানে গিয়ে প্রতিটি মেয়েই বুঝতে পারে জানতে পারে তারা কতটা অপারদর্শী,বার বার আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয় এই জগৎ তোমার নয়,অনাগত তুমি,বৃষ্টির সোঁদা গন্ধে মন তখন ময়ূরের মতো পেখম মেলতে ভুলে যায়, হারিয়ে ফেলে সে ছেলেবেলার পুতুল খেলার সই গুলোকে,গুটিয়ে ফেলে নিজেকে,ভয়,দ্বিধা,দোষ,ক্রোধ কে কাটিয়ে উঠে নিজেকে মেলে ধরতে কেটে যায় আর কিছু বসন্ত।

তখন সে নিজেকে খুঁজে পায় পাতাঝরা মরসুমে চাপা পরে যাওয়া হাজারো শুকনো পাতার মিছিলে,তখন সে বুঝতে পারে জীবনের বেশির ভাগ সময়টাই সে কাটিয়ে ফেলেছে কিন্তু অংকের হিসেবে তখনো গরমিল,নতুনের সাথে পুরোনোর গন্ধে কেটে যাওয়া ঘুড়ির মতো দিকভ্রান্ত হয় সে,ঝুপ করে অন্ধকার নেমে আসে তার জানলা বেয়ে!
শুরু হয় তখন অবহেলার উপহার,বাবার আদরের সেই মেয়েটা তখন জীর্ণ শীর্ণকায় দেহে কাঁপা কাঁপা সুরে সংকীর্তন গায়। সব রং মুছে গিয়ে স্বেতশুভ্র বসন জ্বলজ্বল করে তার দর্পন জুড়ে!
আজ আর তার সব থেকে ছোটো সাইজের মাছ কিংবা লেজা পড়লে মন খারাপ করেনা,বরং সে তৃপ্তি করেই খায়। আবদার করতে ভুলে যায় সে,ভুলে যায় তার ও কিছু আশ থাকতে পারে,দিশেহারা হয়ে যায় নিজের অপরিচিত রূপকে দেখে…

আচ্ছা,কেন আমরাই সারা জীবন ত্যাগ করে যাবো?সমাজের উল্টো স্রোতে নয় সমাজের তালে তালে গা ভাসিয়ে কেন নিজেকে ভালোবাসতে পারবোনা?কেনোই বা পরের জন্যে নিজেকে উজার করে দেব?
একটু ভালোবাসা,একটু বোঝাপড়া ছাড়া তো আমাদের আর কিছুই চাওয়ার নেই,নিজের সব সুখে বিকিয়ে তার বিনিময়ে শান্তির ছায়াতলে আশ্রয় খোঁজা কি অপরাধ?

আমরা হাতে গড়া মাটির পুতুল নয় বজ্রের ন্যায় শক্ত কঠিন ধাতুতে তৈরী হতে চাই,যাতে আমাদেরকে দুমড়োনো মুচড়ানোর আগে কাউকে সহস্র বার ভাবতে হয়।
নারী মানে যে শুধু মোহময়ী মমতাময়ী রূপ নয় নারী মানে রণচন্ডী,অসুরনাশিনি মা চামুন্ডার প্রতিচ্ছবি ।
COMMENTS