The first destination was Maruguma Dam. About 55 km from Purulia city. After going along the national highway for quite some time...
রাজকুমার মুখার্জি, বং 24: এখানে ঠাণ্ডা বেশ বেশি রকমের। হাড় কাঁপিয়ে দেবার মত। কাল রাতে শরীর একটু খারাপ হয়েছিল, ওষুধ খেয়ে একটু চাঙ্গা হয়ে বেরোতে ঘন্টাখানেক দেরী হয়ে গেল। সাড়ে আটটার জায়গায় সাড়ে নটা।
প্রথম গন্তব্য ছিল মরুগুমা ড্যাম। পুরুলিয়া শহর থেকে প্রায় ৫৫ কিমি দূরে। বেশ কিছুটা জাতীয় সড়ক ধরে যাবার পর পথের দুপাশে শাল, মহুয়া, পলাশ গাছের সারি। সারি বললে ভুল হবে - জঙ্গল। শাল, মহুয়ার হাতছানিতে হারিয়ে যেতে আপনি বাধ্য। পাকদন্ডির মত রাস্তা পাক দিয়ে দিয়ে উপরে উঠে চলেছে। মালভূমি তায় পাহাড় - রাস্তার বাহার তো থাকবেই।
পৌঁছে গেলাম মুরুগুমা ড্যাম। রাস্তা থেকে ছোট ছোট ধাপের সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে জলাধার দেখতে পাওয়া যায়। জলের ওপর দিয়ে হাওয়া বয়ে চলেছে, ঢেউ তুলে জল পাড়ে এসে ভাঙছে - ছলাৎ ছল, ছলাৎ ছল।
এখন থেকে বেরিয়ে বেশ কিছুটা উপরে এসে গাড়ি থামলো। দুর্গা চরণ - আমাদের সারথী বললেন এখান থেকে ড্যাম দারুণ দেখতে লাগে। পাহাড়ি পায়ে চলা পথে গুটি গুটি এগিয়ে এসে দেখলাম অপূর্ব মরুগুমাকে। টিলার উপর থেকে শুধু ড্যাম নয়, পুরো পাহাড়ের রেঞ্জ। পাহাড়ের গায়ে সবুজের সমারোহ, নীচে বড় থালায় করে জল নিয়ে কেউ যেন পাহাড়ের পা ধুইয়ে দিচ্ছে।
প্রাতরাশ সেরে চলে এলাম মার্বেল লেক দেখতে। পাহাড় আর লেক একসঙ্গে দেখলে মনে হবে - কোন এক বিশাল দৈত্য ছেনি হাতুড়ি দিয়ে আপন মনে, নিজের মত করে কিছু একটা বানাতে বানাতে ছেড়ে চলে গেছে।
লোকে লোকারণ্য। একে শীতকাল তার ওপর ছুটির দিন। ভীড় উপচে পড়ছে। এবার যাব বামনী ফলস দেখতে। বামনী ফলস দেখতে যাবার রাস্তাটি খুব সরু এবং খাড়াই। হাপরের মত বুকের উঠা নামা আর দেখতে চাই না। ওপর থেকে যা দেখা যায় দেখলাম। বামনির ঝরে পড়া ঝর্না কাছ থেকে আমাদের দেখা হল না।
বামনীর পর আমাদের গন্তব্য ময়ূর পাহাড়। কোন এক শতাব্দীতে এখানে ময়ূরের বাস ছিল। আজ .....। জানি না। পাহাড়ের মাথায় উঠে পুরো অযোধ্যা পাহাড়ের রেঞ্জ দেখলাম। বেশ সুন্দর। এসব জায়গায় শীতের সময় তাপমাত্রার এতো ফারাক থাকার জন্য দুপুরে বেশ গরম এবং রাতে খুব ঠাণ্ডা।
কিছু না খেলেই নয়। মুখোশ গ্রাম যাবার পথে দুপুরের খাওয়া। মুখোশ গ্রাম - আসল নাম চরিদা গ্রাম। পেপার মণ্ড থেকে মুখোশের ছাঁচ, তারপর রঙের প্রলেপে ফুটে উঠেছে এনাদের শিল্পকর্ম। কিভাবে মুখোশ বানানো হচ্ছে দেখলাম। এই হস্তশিল্প কতদিন বেঁচে থাকবে বা বাঁচিয়ে রাখা যাবে জানি না।
অযোধ্যা পাহাড়ের মাথাটা একটা টেবিল এর মত - চ্যাপ্টা।ছোটবেলায় অরণ্যদেবের কমিকস পড়া ওয়াকার টেবিলের মত।
দেখে নিলাম লহরিয়া ড্যাম, আপার ও লোয়ার ড্যাম। লহরিয়া শিব মন্দির দেখার ইচ্ছে ছিল। এখানে ভক্তদের ভক্তির টানাপোড়েনে ভগবানের প্রাণ ওষ্ঠাগত।
এইসব জায়গা ঘুরে আপাতদৃষ্টিতে আমার মনে হয়েছে - এখানের অর্থনৈতিক অবস্থাকে তুলে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে গেলে, এদের পরম্পরা, লোকশিল্প, হস্তশিল্প কে বিশ্বের আঙিনায় নিয়ে যেতে হবে। নাহলে, ছোট ছোট শিশুরা ইস্কুলে না গিয়ে, তালপাতার ফুল বানিয়ে, আমার আপনার হাতে পায়ে ধরে পাঁচ টাকায় সেটা বিক্রি করতে চাইবে - পেট যে বড় দায়, সে যে কোন কিছুই মানতে চায় না।
সন্ধ্যে হয়ে আসছে, হোটেলে ফেরার পালা। কাল পুরুলিয়া শহর ছেড়ে অন্য কোনখানে যাবো। তার গল্প কাল হবে।
অপূর্ব ছবি আর ছবি। আর সাথে আছে বর্ণনমুখর বাস্তবতার সৌন্দর্য। আহা 💜।
উত্তরমুছুন