Beyond Purulia town on NH 14, our car speed forks around 70 or 75 kmph. Jhuma song is playing in the car.
পুরুলিয়া শহর ছাড়িয়ে NH 14, আমাদের গাড়ির গতিবেগের কাঁটা কখনও ৭০ কখনও ৭৫ কিমির আশেপাশে রয়েছে। গাড়িতে ঝুমুর গান চলছে। এখানে বাংলার প্রকৃতি বেশ রুক্ষ। ধূ ধূ প্রান্তরের মাঝে একটি দুটি গাছ দাম্ভিক। মাথা উঁচু করে দূরের পানে তাকিয়ে আছে। বেশ কিছুটা চলার পর রাস্তা ঢুকে পড়ল কতকটা জঙ্গলের মধ্যে। পিচ কালো রাস্তা কখনও উঁচু, কখনও নিচু, কখনও নাক বরাবর সোজা, কখনও আঁকা বাঁকা। দুপাশে শাল, মহুয়া, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, বট, খেঁজুর - না জানি আরো কত রকমের গাছের দল তাদের ডালপালা নাড়িয়ে আমাদের বিদায় জানাচ্ছে। আমার মনে হল তারা যেন আমায় বলছে "তুমিই আমাদের রাজকুমার, আমাদের ভুলে যেও না, আবার এসো"।
পুরুলিয়া থেকে বরন্তী - দূরত্ব প্রায় ৭০ কিমি। মাঝে যাবো জয়চন্ডী পাহাড়। প্রায় ঘন্টা দেড়েক চলার পর এসে পৌঁছলাম জয়চন্ডী পাহাড়। রুক্ষ পাহাড় বললে ভুল হবে। কোথাও রুক্ষ, কোথাও গাছে ভরা। পাহাড়ের মাথায় মাতা চণ্ডীর, বজরং বলির মন্দির। ৫০৩ খানা সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে হবে। আমার সহধর্মিনী মধ্য রাস্তায় রণে ক্ষান্ত দিলেন। আর উপরে উঠবেন না। পায়ের জোর কে টপকে মনের জোর এগিয়ে যেতে পারলো না। হাঁচোর পাঁচোর করে উপরে উঠে গেলাম। পাহাড়ের চূড়া থেকে দূর দূরান্ত অবধি দেখা যাচ্ছে। কি অপূর্ব বলে বোঝাতে পারবো না। নীচে একটা জনপদ, খুব একটা ছোট নয়, নাম জানি নে। জানতে চাই নে। নাম মাহাত্বে কি এসে যায়! নীচে নামতে ইচ্ছে করছিল না। নেমে এসে গাড়িতে উঠে বসলাম, বেশ গরম লাগছে। সবাই গরম জামা ছাড়তে পারলে বাঁচে। এবারে সোজা বরন্তী।
আধঘন্টা চলার পর এসে গেলাম বরন্তী। রিসর্টের নাম মেহুলবন হিল রিসোর্ট। ঘরে মালপত্র ঢুকিয়ে লাঞ্চ খেতে গেলাম। রিসর্টের বাগানের টাটকা সবজি, পুকুরের মাছ - দারুণ খাওয়া। বেলা গড়িয়ে গেছে, রোদের দাপট কম, বেরিয়ে পড়লাম। পায়ে হেঁটে চলে এলাম বরন্তী লেক। উঁচু বাঁধের উপর দিয়ে পিচের রাস্তা পুরো লেক টাকে ঘিরে রেখেছে।
সূর্যদেব সারাদিনের পরিশ্রমের পর পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছেন। পাহাড়ের পিছন দিয়ে আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাবেন। আমরা sunset point থেকে সূর্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তার অপরূপ শোভা দেখছি। গৈরিক রঙের বর্তুল অগ্নিপিন্ড লেকের জলে প্রতিবিম্ব রেখে যাচ্ছেন। যত পাহাড়ের পিছনে সূর্যদেব চলে যাচ্ছেন, জলে প্রতিবিম্বের দৈর্ঘ্য তত লম্বা হচ্ছে। কি অপরূপ তার শোভা, লিখে বোঝানো যাবে না। এ দৃশ্য কোন ক্যামেরায় বন্দী করা যায় না, শুধু মাত্র মন ক্যামেরায় চির জীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে। টুপ করে অন্ধকার নেমে এলো। সমস্ত চরাচর অন্ধকারে ডুবে। আমরা চারজন সেই অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছি - নতুন কোন উৎসারিত আলোর খোঁজে।
এখন প্রায় রাত নটা। পাশের রিসর্টে ধামসা মাদল বাজিয়ে সাঁওতাল নাচ গান হচ্ছে। অনাহুত হয়ে ওখানে আমি যেতে পারবো না। আমাদের ঘরের কোনায় বসে নিজের জগতের কথা লিপিবদ্ধ করে রাখছি। হয়তো আরো কিছু বছর পরে, যখন শরীর ভেঙে যাবে, ঘর বন্দী জীবন কাটাতে হবে, তখন এই লেখাগুলো আমার অচল জীবনের সঙ্গী হবে।
COMMENTS