Soumitra Chattopadhyay's journey in the world of money started at the hands of Satyajit Ray. The world-renowned director finally chose Soumitra.
বং 24 ডেস্কঃ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নামটা উচ্চারণ করলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ধুতি-পাঞ্জাবি পরা এক আদ্যোপান্ত বাঙালির ছবি। উত্তম সমকালীন ও পরবর্তীতে যদি কেউ সেই মহানায়কের কাজকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষমতা রাখেন তিনি নিঃসন্দেহে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এ তুলনা টানা যদিও উচিত নয়, কারণ বাঙালির কাছে তিনি শুধুই একজন অভিনেতা নন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় একজন কবি, নাট্যকার, লেখক, পরিচালক ও বাচিকশিল্পীও বটে। এই কিংবদন্তির আজ ৮৮তম জন্মদিন। ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি আগমন ঘটেছিলো তাঁর।
চলুন কিংবদন্তীর জন্মদিনে তাঁর ও বিশ্ববরেণ্য পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের কিছু যৌথ সমীকরণের কথা শুনি। সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরেই রুপোলি জগতে পথচলা শুরু হয়েছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। ছয় ফুট লম্বা, ফর্সা, ছিপছিপে চেহারার অভিনয় পাগল ছেলেটাকেই অবশেষে নিজের অপু হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন বিশ্ববরেণ্য এই পরিচালক। পথের পাঁচালির পর অপু ট্রিলজি সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ছবি অপুর সংসার (১৯৫৯)-এর সঙ্গেই শুরু এই জুটির পথচলা। সত্যজিতের কেরিয়ারের পাঁচ নম্বর ছবি ছিল এটি। এরপর পরিচালকের বাকি ২৯টি ছবির মধ্যে ১৩টি ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
কীভাবে অপুর চরিত্রের জন্য সৌমিত্রকে বেছে নিয়েছিলেন সত্যজিৎ?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে সৌমিত্র জানিয়েছিলেন ‘অপরাজিত’ ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা ছবির পুরস্কার GOLDEN LION পায়। কলকাতায় ফেরার পর এক সাংবাদিক বৈঠকে উনি বলেছিলেন, প্রাপ্তবয়স্ক অপুর চরিত্র কে করতে পারে, সে কথা ওঁনার মাথায় রয়েছে। আমার কোনও ধারণাই ছিল না উনি আমার কথা ভাবছেন। অপুর সংসারের কয়েক বছর পর, আমাকে জানানো হয়, আমাদের প্রথমবার দেখা হওয়ার পরেই উনি ট্রিলজির কথা ভেবে রেখেছিলেন’।
কোথায় হয়েছিল সত্যজিৎ - সৌমিত্র জুটির প্রথম দেথা?
অপরাজিত ছবির সময় অপুর খোঁজ করছিলেন সত্যজিৎ রায়। সেই সময়ই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের এক বন্ধু, যিনি পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতেন তিনি আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন দুজনের। তবে অপরাজিত’র অপু হিসেবে সৌমিত্রর বয়স ও উচ্চতা দুটোই বেশি বলে মনে করেছিলেন সত্যজিৎ। তবে ট্রিলজির প্ল্যানিংটাও যে এদিনই সেরে ফেলেছিলেন তা টের পাননি সৌমিত্র নিজেও।
সৌমিত্র বারবার নিজের মুখে জানিয়েছেন ‘বাবা ছেলের সম্পর্কে যেমন পজেসিভ হয় মানিকদা আমাকে নিয়ে তেমন পজেসিভ ছিলেন’। সৌমিত্র’র মেন্টারের ভূমিকাটা পুরোদস্তুর পালন করেছেন সত্যজিৎ।
অপুর সংসারের পরের বছরেই মুক্তি পেয়েছিল দেবী। সত্যজিতের এই ছবিতে জুটি ছিল সৌমিত্র-শর্মিলা। রবীন্দ্র সাহিত্য নিয়েও যখন কাজ করেছেন সত্যজিতের সেই ছবিতেও ঘুরে ফিরে এসেছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষে মুক্তি পেয়েছিল সত্যজিত পরিচালিত রবি ঠাকুররের তিনটি ছোটগল্প নিয়ে তৈরি ‘তিনকন্যা’। সমাপ্তি’তে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল সৌমিত্রকে। অন্যদিকে চারুলতা (১৯৬৪) ছবি ছিল এই জুটির অন্যতম মাইলস্টোন। রবীন্দ্রনাথের নষ্টনীড় অবলম্বনে তৈরি এই ছবিতে অমল চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন সৌমিত্র। মাধবী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর রসায়ন - সে তো ভাষায় প্রকাশ করা বড়োই দুষ্কর।
ষাটের দশকে সত্যজিতের পরিচালনায় অভিযান (১৯৬২), কাপুরুষ (১৯৬৫), অরণ্যের দিনরাত্রি (১৯৬৯)-র মতো ছবিতে অভিনয় করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক বিরল সম্পদ অশনি সংকেত। ১৯৪৩-৪৪ সালের দুর্ভিক্ষপীড়িত অবিভক্ত বাংলার প্রেক্ষাপটে তৈরি এই ছবির গঙ্গাচরণ চক্রবর্তীকে আজও ভুলতে পারেনি বাঙালি।
সত্তরের দশকের শুরুতেই সত্যজিতের ফেলুদা হিসাবে রুপোলি পর্দায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন সৌমিত্র। মাণিকদা যে নিজের কল্পনার ফেলুদা রূপে সৌমিত্রকেই ভেবে রেখেছেন সেই আভাস আগেই পেয়েছিলেন অভিনেতা, ছবির তৈরির সিদ্ধান্তের পর চটপট সুখবর পৌঁছেছিল তাঁর কাছে। ১৯৭৪ সালে এই সোনার জুটি তৈরি করে ‘সোনার কেল্লা’। পাঁচ বছর পর মুক্তি পায় ফেলুদা সিরিজের দ্বিতীয় ছবি ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’।
সত্যজিত রায়ের সব ছবিতে যে শুধু কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসাবেই সৌমিত্র কাজ করেছেন তা নয়। সৌমিত্র জানিয়েছিলেন, গুপী গাইন বাঘা বাইন ছবিতে অভিনয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তবে সত্যজিত্ সাফ মানা করে দেন, বলেন এই ছবির দুই চরিত্রের সঙ্গেই খাপ খান না সৌমিত্র।কিন্তু যখন হীরক রাজার দেশে (১৯৮০) তৈরি করলেন সত্যজিৎ তখন উদয়ণ পন্ডিতের চরিত্র সৌমিত্র ছাড়া আর কাউকে ভাবতে পারেননি পরিচালক।
সৌমিত্র-সত্যজিত জুটির আরও একটি কালজয়ী ছবি ‘ঘরে-বাইরে’। এই ছবির চিত্রনাট্য সত্যজিত্ তৈরি করেছিলেন পথের পাঁচালিরও আগে। কান চলচ্চিত্র উত্সবে The Palme d'Or এর জন্য প্রতিযোগিতামূলক বিভাগে প্রদর্শিত এই ছবিতে সন্দীপ মুখুজ্জের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র।
সত্যজিতের কেরিয়ারের শেষের দিকে শাখা-প্রশাখা ও গনশত্রু'তেও কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সত্যিজিতের মোট ১৪টা ফিচার ফিল্ম আর দুটো শর্ট ফিল্মে অভিনয় করেছেছেন সৌমিত্র। এমনকি কাহিনিকার সত্যজিতের শেষ ছবি ‘উত্তরণ’-এর কেন্দ্রবিন্দুতেও ছিলেন এই কিংবদন্তি। ১৯৯২ সালে এই ছবির শ্যুটিং শুরুর এক মাস আগে হাসপাতালে ভর্তি হয় পরিচালক, পরবর্তী সময়ে সন্দীপ রায় এই ছবি পরিচালনা করেছিলেন।
বাংলা তথা বিশ্ব চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করেছে এই জুটি। যতদিন বাঙালি থাকবে, বাংলা চলচ্চিত্র থাকবে ততদিন সৌমিত্র-সত্যজিৎ জুটি ঘুরে ফিরে আসবে বাঙালির মননে - বাঙালির জীবনে। মহারাজা ও তাঁর এই সুযোগ্য সহযোদ্ধাকে সেলাম জানাবে বাঙালি।
কিংবদন্তী অভিনেতার ৮৮তম জন্মদিনে Bong 24 এর পক্ষ থেকে ওঁনাকে জানাই শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। মহান শিল্পী, আপনি যেখানেই থাকুন - ভাল থাকুন।
COMMENTS