কৌশিক চ্যাটার্জি , খোঁজ ২৪ঃ সুন্দরবনের সৌন্দর্য আমাদের মোহিত করে সবসময়,কিন্তু এর পাশাপাশি সুন্দর বনের অনেক সমস্যা আছে যেমন বাঁধ,প্রতি ...
কৌশিক চ্যাটার্জি , খোঁজ ২৪ঃ সুন্দরবনের সৌন্দর্য আমাদের মোহিত করে সবসময়,কিন্তু এর পাশাপাশি সুন্দর বনের অনেক সমস্যা আছে যেমন বাঁধ,প্রতি বছর বন্যা বয়ে যায় অনেক গ্রাম, গ্রাম বাসিন্দাদের কথা হলো প্রতি বছর এনে কোটি কোটি টাকা খরচ না করে কংক্রিটের বাঁধ দিয়ে দিলে সুন্দর বনের গ্রামবাসীদের বড় উপকার হয়, এখানকার মধুচাষিদের ও সমস্যা আছে, কি ভাবে প্রানের ঝুঁকি নিয়ে মধু চাষ করে, সেই সব কথা তাদের মুখ থেকে শুনবো আজকের পর্বে।
মধুচাষি অর্থাৎ মৌয়ালরা যেমন তাদের জীবন জীবিকার জন্যে কঠিন সংগ্রাম করে যাচ্ছে ঠিক তেমনি একই ভাবে সুন্দরবনের মহিলারাও বুটিকের কাজের মাধ্যমে তাদের জীবিকার পথ খুঁজে নিয়েছে। এই কাজে তাদের পূর্ণ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সুন্দরবন মহিলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কো-অপারেটিভ সোসাইটি। তারা বুটিকের কাাজ শিখিযে এইসব মহিলাদের স্বাবলম্বী করে যাচ্ছেন অনের বছর ধরে।
ভিডিও দেখতে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন
আর এই সুন্দরবন উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে মানুষটির কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই তিনি হলেন ভারত সরকারের পদ্মশ্রী প্রাপ্ত শিক্ষক তুষার কঞ্জিলাল মহাশয়। তিনি ছিলেন একটি এন জি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, যেটি সুন্দরবনের মানুষদের উন্নয়নকল্পে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে তার প্রতিষ্ঠান টেগোর সোসাইটি অফ রুরাল ডেভেলপমেন্টের সাথে একাত্ব হয়ে সুন্দরবনের উন্নয়নের জন্যে কাজ শুরু করেন। সুন্দরবনের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন ভগবান স্বরূপ।
১৯৮৮ সালের ২৯ শে নভেম্বরের ভয়াবহ বন্যার কথা আপনাদের নিশ্চই মনে আছে? ঐ বন্যার কবলে পড়ে সুন্দরবন পুরোপুরি ধ্বংস হতে বসেছিল। কাঞ্জিলাল মহাশয় নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সুন্দরবনের মানুষের পাশে তাদের ঘরবাড়ি আর জীবন বাচানোর তাগিদে। জীবনের শেষ দিন অবধি তিনি এইসব মানুষদের পাশে ছিলেন বটগাছের মত।
সুন্দরবনের মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল বন্যার প্রকোপ আর এই বন্যার কবল থেকে বাঁচার একমাত্র পথ হল কংক্রিটের বাধ। ওদের কথায় - আমরা ত্রাণ চাইনা, বাঁধ চাই।
সুন্দরবনে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের বাস, যাঁদের মধ্যে ২০ লক্ষ অতি অসুরক্ষিত, বিশেষত যাঁরা দ্বীপগুলির বাসিন্দা। এঁদের সিংহভাগই প্রান্তিক মানুষ। এই বিপুলসংখ্যক গরিব মানুষের পুনর্বাসন খুব সহজ কথা নয়, বিশেষ করে আমাদের মতো রাজনৈতিক দুর্নীতিপ্রবণ দেশে। কিন্তু যদি আমরা সুন্দরবনকে বাঁচাতে চাই, তা হলে এ ছাড়া গতি নেই। আমাদের উদ্যোগ, উদ্যম আর সর্বোপরি অর্থনৈতিক অনুদান সেই দিকে বিনিয়োগ করতে হবে। এই প্রসঙ্গে কিছু সাম্প্রতিক গবেষণাপত্র দেখিয়েছে যে অর্থনৈতিক ভাবেও এই পশ্চাদপসরণ বিনিয়োগ হিসেবে অনেক বেশি দূরদর্শী।নিত্যনৈমিত্তিক দুর্যোগ সুন্দরবনের অধিবাসীদের কাছে প্রায় দৈনিক সংগ্রামের ব্যাপার। আজ আমপান অথবা ১১ বছর আগে আয়লা নিয়ে হইচই হয়, কারণ এগুলো অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। কিন্তু এই ১১ বছরে আরও বহু বার সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেগুলির সম্মিলিত ক্ষয়ক্ষতি বিপুল। কয়েকটি সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রে দেখা যাচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে একশোর বেশি মাঝারি থেকে বড় প্লাবনের ঘটনা ঘটেছে, যার প্রত্যেকটিতে প্রায় ১০,০০০ থেকে ৪০,০০০ বাসিন্দা কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে সমুদ্র বা নদীগর্ভে। অসংখ্য পরিবার গৃহহারা হয়েছে, বিস্তীর্ণ চাষের জমি, মাছের পুকুর ইত্যাদি ব্যবহারের অযোগ্য হয়েছে। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ইত্যাদির তথ্য সম্বলিত করে দেখা যাচ্ছে, ১১ বছরে সামগ্রিক আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা।
যেহেতু এই ক্ষতি অনেকটা সময় ধরে বিস্মৃত, তাই এই হিসেব আমাদের ভাবায় না বা উন্নয়নের নীতির আমূল পরিবর্তন ঘটাতে উদ্বুদ্ধ করে না। এই ক্ষতির হিসাবের মধ্যে, বলে রাখা ভাল, লক্ষাধিক মানুষের দীর্ঘমেয়াদি ক্লেশ, যন্ত্রণা, বিপত্তি, সংগ্রাম ইত্যাদির কোনও রকম প্রতিফলন নেই। তাঁরা প্রান্তিক, তাঁদের দুঃখদুর্দশা আমাদের বিচলিত করেও না, নীতিনির্ধারণে পরিবর্তন তো দুরের কথা। সর্বোপরি রাজনৈতিক শক্তি থেকে দালালদের নিয়মিত রোজগার বন্ধ হয়ে যায় তা হলে।ঘূর্ণিঝড় বন্যায় কার্যত তছনছ করে দেয় সুন্দরবনের একাধিক অঞ্চল । নদীতে পাকা বাঁধ না থাকায় প্রবল জলস্ফীতির কারণে একাধিক জায়গায় অস্থায়ী নদী বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম ৷বানভাসি মানুষদের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিলির কাজ চলে সুন্দরবনের একাধিক এলাকায় ৷ কিন্তু প্রশাসনের কাছে গ্রামবাসীদের আবেদন, ত্রাণ চাই না আমরা, চাই কংক্রিটের নদী বাঁধ । এই দাবি নিয়েই প্রতিনিয়ত সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামবাসীরা নদী বাঁধের উপরে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখান ৷ গোসাবা বিধানসভার রাঙাবেলিয়া পাখিরালা, দয়াপুর, সাতজেলিয়া, লাহিরিপুর-সহ একাধিক এলাকার মানুষদের একটাই দাবি চাই পাকাপোক্ত কংক্রিটের নদী বাঁধ ।
আমপানের কিংবা যশের ক্ষতে সাময়িক মলম লাগিয়ে এই সমস্যা মিটবে না। তার জন্য বৃহত্তর পরিকল্পনা, সুদূরপ্রসারী চিন্তা প্রয়োজন। তারও আগে প্রয়োজন পাল্টে দেওয়ার ইচ্ছেটুকু।
ভিডিও নির্মানঃ কৌশিক চ্যাটার্জি ও সঞ্জয় কুমার দত্ত, KHONJ 24






COMMENTS