নীতিশিক্ষায় সমাজ গড়ুন - দুর্নীতির শিক্ষায় নয়। শিক্ষার দুই আলোকবর্তিকা ইদ বক্স ও সুজিত চট্টোপাধ্যায়

  কেরামত আলি, বর্ধমানঃ বর্ধমানের কমলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ইদ বক্স মহাশয় ২০০৮ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্...


 কেরামত আলি, বর্ধমানঃ বর্ধমানের কমলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ইদ বক্স মহাশয় ২০০৮ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক প্রতিভা পাতিল পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন।

প্রধান শিক্ষক ইদ বক্স মহাশয়
সংখ্যালঘু ও এসটিএসসি সম্প্রদায়ের মানুষজনের বসবাস ছিল গ্রামে পড়াশোনার মান ছিল খুব নিম্নমুখী। তিনি নিজে প্রথম জীবনে পড়াশোনা শেষ করে নিজের জায়গাতেই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামের ছেলে মেয়েদের জন্য। স্কুলকে সাজিয়ে তোলেন নিজের অর্থ ব্যয় করে।

ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াচ্ছেন ইদ বক্স মহাশয়
পরবর্তীকালে রাজ্য সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় স্বীকৃতি দেয়। বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক হন তিনি। অবসর নেওয়ার পর বর্তমানে এখনো বিদ্যালয়ে যান নিয়মিত। নির্মল বিদ্যালয় থেকে শুরু করে আদর্শ বিদ্যালয় বহু পুরস্কার পেয়েছে সেই বিদ্যালয়। তারই প্রচেষ্টায় সেজে উঠেছে সেই বিদ্যালয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাবরেটরি থেকে শুরু করে লাইব্রেরী, তিনি উদ্যোগ নিয়ে করেছেন।


স্বাধীনতার ৭৫বছর পরেও সমাজ যে অস্থীর অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে তা আমাদের প্রত্যেক মুহূর্তে জানান দিচ্ছে সময়, নুন্যতম প্রাথমিক প্রয়োজনটুকুও মিটছে না সাধারণ মানুষের। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান আর শিক্ষা, মানুষ অর্থের পিছনে ছুটে চলেছে, আর শিক্ষা আজ ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।
শিক্ষায় দুর্নীতির পরাকাষ্ঠা শ্রীমান পার্থ চট্টোপাধ্যায়
বেসরকারী স্কুল, প্রাইভেট টিউশন সব সরকারের হটকারী সিদ্বান্ত ফলে এত বছর ধরে এখনো একটি সঠিক শিক্ষা নীতি নির্ধারিত না হওয়া, সবমিলিয়ে সমস্ত বিষয়টাই খুব গোলমেলে-----
কিন্তু আমরা সবাই জানি শিক্ষাই হচ্ছে সেই জাদুমন্ত্র যা গড়ে তোলে মানুষ।সেই সব শিক্ষিত মানুষ গড়ে তোলে সুন্দর সমাজ, আর শিক্ষিত মানুষের গড়া সমাজ তৈরী করে সুন্দর অর্থনীতি- এগিয়ে চলে দেশ।
যেখানে এই মুহূর্তে শিক্ষা নিজেই ব্যবসা হয়ে উঠেছে এই ঘোরতর দুর্যোগের দিনে এক আশ্চর্য্য আলোর সাথে আপনাদের আলাপ করিয়ে দিতে চাই.... হ্যাঁ আলো এক জ্বলন্ত সূর্য যার একমাত্র লক্ষ্য মানুষ তৈরী করা... তিনি সদাই ফকির----

সদাই ফকিরের পাঠশালাঃ

সদাই ফকিরের পাঠশালা

সর্বদা যিনি ফকির, হ্যাঁ এককালে জমিদার তনয়, আজ পয়সায় তিনি গরীব বটে কিন্তু হৃদয়ে তিনি রাজা। আগে ছিল বছরে ১ টাকা, এখন বেড়ে হয়েছে ২ টাকা ৷ মাত্র ২ টাকার বিনিময়ে ছেলে-মেয়েদের পড়ান মাস্টারমশাই সুজিত চট্টোপাধ্যায় ৷ পূর্ব বর্ধমানের রামনগর গ্রামের সদাই ফকিরের পাঠশালা ৷ একডাকে চেনে সবাই ৷ বিগত ১৮ বছর ধরে পড়াচ্ছেন আদিবাসী অধ্যুষিত আউশগ্রামের প্রত্যন্ত জঙ্গল এলাকার ছেলে-মেয়েদের ৷


আউশগ্রামের জঙ্গল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে মোড়বাঁধ এলাকা । সেখান থেকে আরও তিন কিলোমিটার গেলে রামনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা । সেখানে যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই দেখিয়ে দেবে সদাই ফকিরের পাঠশালা । হলদে রংচটা পাঁচিল ৷ নীল গেট ৷ গেটের পাশে লেখা, "লিখে রেখো একফোঁটা দিলেম শিশির", সদাই ফকির ৷ ভিতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে খোলা বারান্দা ৷ মাথায় টিনের চাল ৷ বারান্দার একপাশে পুরানো কাঠের চেয়ারে বসে ছেলে-মেয়েদের পড়াচ্ছেন বছর ৮০-এর সুজিতবাবু ৷ কিন্তু নিজের নাম হঠাৎ সদাই ফকির রাখেলেন কেন? উত্তরে হাসিমুখে ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মশ্রী ভুষিত সুজিতবাবু বলেন, "২০০৪ সালে অবসর নেওয়ার পর থেকে আমি পড়াচ্ছি ৷ তখন যারা আমার কাছে পড়ত, তারা বলত স্যার আপনার অনেক টাকা ৷ আমি বলতাম, আমার টাকা-পয়সা নেই ৷ কিন্তু, ওরা আমার কথা কিছুতেই বিশ্বাস করত না ৷ শেষমেশ ওদের বিশ্বাস করানোর জন্য সদাই ফকির নামটা নিয়েছি ৷ " ২০০৪ সালের আগে রামনগর হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন সুজিতবাবু ৷ এলাকাবাসীর বেহাল আর্থিক অবস্থার কথা খুব ভালো করেই জানতেন সুজিতবাবু ৷ কারণ তিনবার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের পদ সামলেছেন তিনি ৷ সুজিতবাবু বলেন, "এখানে মানুষের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ৷ 

ছাত্রছাত্রীদের সাথে সদাই ফকির

প্রায় ২২-২৫ কিলোমিটার দূর থেকে ছেলে-মেয়েরা আসে ৷ জঙ্গলের ভিতরে ভিতরে গ্রাম ৷ সেখান থেকে সাইকেল নিয়ে ওরা পড়তে আসে ৷ টিউশন অনেকেরই নেই ৷ সেইজন্য আমার কাছে ওরা আসে ৷ আমি তিনটি টার্ম গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলাম ৷ তাই সবটাই আমি জানি ৷ আমি ওদের বলি, আমার কাছে পড়তে হলে বছরে ১ টাকা গুরুদক্ষিণা দিতে হবে ৷ ওরাও শুনে খুব খুশি হয় ৷ সেই থেকেই শুরু ৷ " এখন বছরে ২ টাকার বিনিময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ান সুজিতবাবু ৷ বলেন, "দু'-তিন বছর আগে ২ টাকা থেকে গুরুদক্ষিণা বাড়িয়ে করেছি বছরে ২ টাকা ৷ "

সদাই ফকিরের পাঠশালার ছাত্রছাত্রী

পাশাপাশি থ্যালাসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য অর্থ সাহায্যও করেন সুজিতবাবু ৷ নিজের পেনশনের টাকার একাংশ এই কাজে ব্যয় করেন ৷ সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগিতা করে ছাত্র ছাত্রীরাও । পাশাপাশি গ্রামের মানুষরাও সহযোগিতা করে ৷ শুরুটা হয়েছিল একজনকে দিয়ে ৷ এখন সব মিলিয়ে ১৬ জন থ্যালাসেমিয়া রোগীর চিকিৎসার জন্য তাদের পরিজনদের আর্থিক সাহায্য করেন ৷

ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াচ্ছেন সুজিত চট্টোপাধ্যায় মহাশয়

সুজিতবাবু জানান, আট-দশ বছর আগে গ্রামেরই এক যুবতিকে বাচ্চা কোলে ভোরবেলা বাসস্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন ৷ জিজ্ঞাসা করে জানতে পেরেছিলেন, বাচ্চাটির থ্যালাসেমিয়া রয়েছে ৷ প্রতিমাসেই তাকে বর্ধমানে যেতে হয় রক্ত পালটানোর জন্য ৷ বলেন, "শুনে খুব খারাপ লেগেছিল ৷ ওই যুবতির আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল ৷ তার উপর বর্ধমান যাওয়া, সারাদিন ওখানে থাকা-খাওয়া, সব মিলিয়ে অনেক খরচ ৷ তাই কিছুটা সাহায্য করার জন্য আমার ছাত্র-ছাত্রীদেরও বলি ৷ তারাও ১০ টাকা করে দেয় ৷ সব মিলিয়ে ওই যুবতির পরিবারের হাতে ৫,০০০ টাকা তুলে দিই ৷ এখন প্রায় ১৬ জন থ্যালাসেমিয়া রোগীর পরিবারকে অর্থসাহায্য করা হয় ৷ এলাকার অনেকে সাহায্য করে ৷ "

সুজিত চট্টোপাধ্যায়ের ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মশ্রী পুরস্কার গ্রহন

মাস্টারমশাই খুব ভালো পড়ান ৷ প্রয়োজনে সাহায্যও করেন বলে জানায় ছাত্র-ছাত্রীরা ৷ সুজিতবাবুর ছাত্রী সালেহা খাতুন ৷ ক্লাস টুয়েলভে পড়ে ৷ বলে, "স্যার খুব ভালো পড়ান ৷ এই বয়সে উনি যেভাবে পড়ান, কমবয়সি স্যাররাও সেভাবে পড়ান না ৷ বেতন নেন না ৷ বছরে মাত্র ২ টাকা গুরুদক্ষিণা নেন ৷ কোনও চাপও দেন না ৷ বিপদে সাহায্য করেন ৷ "


এতো কম গুরুদক্ষিণা কেন ? সুজিতবাবুর কথায়, এমনিতেই এক একটি ছেলেমেয়েকে তিনটে চারটে করে টিউশন পড়তে হয়। সেজন্য মোটা টাকা খরচ করতে হয় তাদের পরিবারকে। এছাড়াও পড়াশোনার অন্যান্য খরচও আছে। আমি যদি আবার অন্যদের মতো টিউশন ফি নিই তাহলে খুবই সমস্যায় পড়বে তারা। হয়তো অনেকে পড়াই ছেড়ে দেবে। নিষ্পাপ সরল এই ছেলেমেয়েদের হাসিমুখের উজ্জ্বলতার কাছে টাকা পয়সা কিছুই নয়। অর্থ নয়, পিছিয়ে পড়া এলাকার এই পড়ুয়াদের ভালবাসাই পাথেয় সদাই ফকিরের।

সেলাম মাস্টারমশাই !  আজ শিক্ষার দুই আলোকবর্তিকা ইদ বক্স ও সুজিত চট্টোপাধ্যায় - গর্বে মশগুল গোটা বাংলা


ভিডিও নির্মানঃ সাংবাদিক কৌশিক চ্যাটার্জি ও সঞ্জয় কুমার দত্ত,  KHONJ 24

COMMENTS

নাম

অজানা তথ্য,5,আন্তর্জাতিক,6,ছোটগল্প,2,ডিয়ার বেঙ্গল,23,বিনোদন,19,ব্লগSHOT,24,ভাগ্যলিপি,1,ভারতকথা,3,ভ্রমন কাহিনী,7,লাইফস্টাইল,16,সাম্প্রতিক,100,স্বাস্থ্য কথা,13,হ্যাংলা পেটুক,6,
ltr
item
Bong24.in: নীতিশিক্ষায় সমাজ গড়ুন - দুর্নীতির শিক্ষায় নয়। শিক্ষার দুই আলোকবর্তিকা ইদ বক্স ও সুজিত চট্টোপাধ্যায়
নীতিশিক্ষায় সমাজ গড়ুন - দুর্নীতির শিক্ষায় নয়। শিক্ষার দুই আলোকবর্তিকা ইদ বক্স ও সুজিত চট্টোপাধ্যায়
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgdrvrNPYW6PxvsN-Zrn3vff5mc3x1wv13BfF-uupgC5HkJUH5-KEl17rdSEQzpoh3C7D2YfM6mPB7c0wGiSHIwlZpAda9-5kDthFvQ3no9QYn9CLaqjXO-rlBweIs8dkSgkr1ooSWAM4ca_HNZa3FyM236hW8mESu0VkvqhGnzEeWG7hM61QWwAg/s16000/COVER%20copy.jpg
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgdrvrNPYW6PxvsN-Zrn3vff5mc3x1wv13BfF-uupgC5HkJUH5-KEl17rdSEQzpoh3C7D2YfM6mPB7c0wGiSHIwlZpAda9-5kDthFvQ3no9QYn9CLaqjXO-rlBweIs8dkSgkr1ooSWAM4ca_HNZa3FyM236hW8mESu0VkvqhGnzEeWG7hM61QWwAg/s72-c/COVER%20copy.jpg
Bong24.in
https://www.bong24.in/2022/08/sadai-fakirer-pathsala.html
https://www.bong24.in/
https://www.bong24.in/
https://www.bong24.in/2022/08/sadai-fakirer-pathsala.html
true
3543138551337409656
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy Table of Content