BONG 24 : আমাদের দেশের বেশির ভাগ তরুণই নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শ গোপন করে রাখেন। যারা গোপন করেন না তাদের একটি বড় অংশই লেখেন ‘আমি রাজনীতি পছন্দ ...
BONG 24: আমাদের দেশের বেশির ভাগ তরুণই নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শ গোপন করে রাখেন। যারা গোপন করেন না তাদের একটি বড় অংশই লেখেন ‘আমি রাজনীতি পছন্দ করি না’ কিংবা ‘রাজনীতি আমার কাজ নয়’। সেখানে অনেকে ‘আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর নিয়ে লাভ কি?’ এই জাতীয় মন্তব্য যেমন লেখেন, আবার অনেকেই রাজনীতি নিয়ে বাজে মন্তব্যও করে থাকেন।
সুতরাং সাধারণভাবে দেখা যায়, এ দেশের তরুণ প্রজন্ম রাজনীতি নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। অতীতে যেমন তরুণদের অনেকেই রাজনীতিতে আসতে চাইতেন এখন সে রকম সক্রিয় রাজনীতিবিদ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। আর্থিক ফায়দা নিতে আসা তথাকথিত তরুণ রাজনীতিবিদদের অবশ্য গোনায় ধরে লাভ নেই। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় রাজনীতিতে আসা দূরে থাক, অনেক তরুণই রাজনীতিকে এবং রাজনীতিবিদদের ঘৃণা করেন। আরও ভয়ানক তারা সেটা প্রকাশ্যে স্বীকার করতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না!
অনেকের মতে, ‘অশিক্ষিত রাজনীতিবিদদের সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ সমস্ত রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতির প্রতি বিমুখ হয়ে উঠছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণেরা সে রকম মন্তব্যই করে যাচ্ছে। বিষয়টি দেশের রাজনীতির জন্য ভালো কোনো সংবাদ বহন করে না। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের রাজনীতিতে বর্তমানে অনুকরণীয় কেউ নেই। সেই অবস্থায় রাজনৈতিক সংঘাত দেশকে আরও বেশি করে নেতৃত্বশূন্যতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
এ ব্যাপারে রাজনীতিবিদ ও সামাজিক নেতৃত্বের উদাসীনতা ও উদ্যোগের অভাবে তারা অনেক বেশি আশাহত। এতে অধিকাংশ মানুষ দেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
আত্মপ্রচারের সংস্কৃতি, দলীয় বিভাজন, ক্ষমতাকেন্দ্রিক মানসিকতা, রাজনীতিতে ধর্মীয় প্রভাব, আদর্শহীনতা, দুর্বৃত্তায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতার সংস্কৃতি এই শঙ্কার পেছনে অন্যতম কারণ।
একথা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই যে, নির্বাচন সুষ্ঠু কিনা তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকলেও প্রতি ৫ বছর পরপর দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং সেগুলোর সবগুলোতেই বড় দলগুলো অংশ নিচ্ছে। কিন্তু এসব নির্বাচন নিয়েও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তেমন এমটা উত্তেজনা কাজ করে না যতোটা না কাজ করে বহুদূরের দুই অপরিচিত দেশের মধ্যে ৪ বছর পর পর অনুষ্ঠিত ফুটবল ম্যাচ নিয়ে!
তরুণেরা ধরেই নিয়েছেন, নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনমানের তেমন কোনো বড় ধরনের পরিবর্তন হবে না, হবে শুধু ক্ষমতার পালাবদল।
এ ছাড়া নির্বাচনকেন্দ্রিক কিংবা বিভিন্ন দলীয় আর অন্তর্দলীয় সংঘাতের তিজ্ঞ অভিজ্ঞতাও তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিবিমুখতার কারণ। শিক্ষা থেকে শুরু করে চাকরী নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি দেখেও নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বীতশ্রদ্ধ হয়ে রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
এছাড়া আমরা দেখতে পাচ্ছি, আজ যাকে রাজনৈতিক দলগুলো হিরো বানাচ্ছে, কালই তাকে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে আবার কাল যে ছিল তার কাছে রোল মডেল, আজ সে রীতিমতো বড় মাপের ভিলেন ! আজ যে নেতা অমুক দলের আদর্শের কাছে ‘মাথা নত’ করে সেই দলে যোগ দিয়েছে, কালই সে ওই দল থেকে বেরিয়ে তাকে গালমন্দ করছে। চোখের সামনে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এমনকি অনেক ‘বরেণ্য’ বা বয়োজ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদদের চরম নির্লজ্জ্বতায় তরুণ প্রজন্ম এখন অভ্যস্ত। তাদের কাছে রাজনীতিবিদরা হয়ে যাচ্ছেন খল অভিনেতা কিংবা কমেডিয়ান।
রাজনীতি বা রাজনীতিবিদদের উপর তরুণদের বিরক্তির উদ্রেক হওয়ার পেছনে অন্যতম আরেকটি কারণ রাজনীতিবিদদের অযাচিত, অশালীন এবং ঢালাওভাবে মিথ্যা কথা বলা। আজকাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কারণে সবাই জানেন সত্যটা কি। নিজ মুখে মনগড়া ইতিহাস রচনা করে দিলেই যে তরুণ প্রজন্ম তা মেনে নেবে - সেটা ভাবা আর বোকার স্বর্গে বসবাস করা একই কথা।
এসব দেখে অনেক তরুণ মনে করছেন, রাজনীতি হলো ক্ষমতায় যাওয়ার প্রতিযোগিতার এক দৌড়। এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচনের মাধ্যমে হয় শুধু ক্ষমতার পালাবদল। আর এসব কারণেই শিক্ষিত সমাজ রাজনীতি থেকে ধিরে ধিরে সরে যাচ্ছে ।
শুরুর কথায় আবার আসি, ‘আমি রাজনীতি পছন্দ করি না’ কিংবা ‘রাজনীতি আমার কাজ নয়’। না এটা বললে চলবে না, শিক্ষিত মানুষদের অবশ্যই রাজনীতিতে আসতে হবে, নাহলে অশিক্ষিত আর দুর্নীতিগ্রস্থ এই রাজনৈতিক নেতাগুলো এভাবেই একদিন দেশটাকে সর্বনাশের চরম সীমায় পৌছে দেবে।
ভিডিও নির্মাণঃ
Host: Koushik Chatterjee
Reporter: Sanhita Barui
Camera: Soumen Santra
Editing & Graphics: Sanjoy Kr Dutta
Concept & Direction: Koushik Chatterjee
Produced by: IDEAL Production














COMMENTS