পারমিতা ঘোষ মজুমদারঃ পিতৃপক্ষের অবসান এবং দেবীপক্ষের সূচনালগ্ন'র পূর্ববর্তী অমাবস্যাই 'মহালয়া'। 'মহ' অর্থাৎ 'উৎসব...
পারমিতা ঘোষ মজুমদারঃ পিতৃপক্ষের অবসান এবং দেবীপক্ষের সূচনালগ্ন'র পূর্ববর্তী অমাবস্যাই 'মহালয়া'। 'মহ' অর্থাৎ 'উৎসব' বা পুজো। আলয় মানে 'আশ্রয়'। তবে এখানে আশ্রয় বলতে দেবীই স্বয়ং...কথিত আছে এই দিন তর্পনের মাধ্যমে পিতৃপুরুষ বা পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে জল দান করেন অনেকে। এতে, তাঁরা পিতৃলোক হতে মুক্তি লাভ করেন।
পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি এই পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজাও বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে যাওয়ার আগে শ্রী রামচন্দ্র শরৎকালে দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন। অকালে তথা শরৎকালে অনুষ্ঠিত হওয়া এই পূজা তখন থেকেই অকালবোধন নামে পরিচিত ।
দাদুর মুখে বিভোর হয়ে শুনতাম এসব গল্প। তখনো বাইরেটা অল্প অন্ধকার। দাদু পিতৃপুরুষদের মুক্তির কথা এমনভাবে বিশ্লেষণ করতেন যে আমার ঘুম জড়ানো দুটো চোখে নোনা জলের ধারা নামত। তার কিছুক্ষণ পরেই রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রে কন্ঠে শুরু হত ...
" আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর;
ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা;
প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত
জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা"।...
দেবীর নৃত্যরতা অবস্থায় অসুরের বুকে ত্রিশূল বিদ্ধ করা, নদী পাহাড়, কাস ফুলের বন, শরতের আকাশ, শিউলি ফুল, রক্তজবা, মায়ের লাল চরণ... কোথায় যেন হারিয়ে যেতাম। নিজেকে ওই নৃত্যরত দেবীর জায়গায় কল্পনা করতাম। কিন্তু অসুর হবে কে! কখনো বাবা আবার কখনো কাকুকে অসুর বানাতাম। ওরাও যেন আমার সাথে বাচ্চা হয়ে যেত।
আমি ত্রিশূল হাতে ছুটতাম। নদী, পাহাড়, কাসবন, পেড়িয়ে অজানার দেশে। কল্পনায় ভেসে বেড়াতাম সারাদিন ঐ মেঘেদের মতো। আমার নাকে শিউলি ফুলের গন্ধ আসত, ধূপধুনো আর চরনামৃতের গন্ধ আসত।
সারাদিন পর রাত্রিবেলায় ঘুমোনোর সময় আবার পিতৃপুরুষের কথা মনে পড়ত। দাদুর সুর করে গাওয়া গান মনে পড়ত। বুকটা কেঁপে উঠত। বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতাম। কেন জানিনা একটা অজানা কারণে কান্না পেত খুব। আমার এসব আচরণে মা আমাকে পাগল ভাবত। এখনো পাগলই আছি।
তবে ভোরে উঠে আর মহালয়া শোনা হয়না। কল্পনাগুলোও আসেনা। কিন্তু কোথাও একটা মন কেমন করা আসে। এবং থেকেই যায়...






COMMENTS