পিনাক্ষি চ্যাটার্জি , কলকাতাঃ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের প্রান্তিক পুঁড়ি গ্রামের মধ্যে কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রও ছিল না৷ ছিল না কোনো সরকার...
পিনাক্ষি চ্যাটার্জি , কলকাতাঃ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের প্রান্তিক পুঁড়ি গ্রামের মধ্যে কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রও ছিল না৷ ছিল না কোনো সরকারি ডিসপেনসারি ৷ হাসপাতাল বলতে সবচেয়ে কাছে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতাল, তাও ১১ কিলোমিটার দূরে৷ গ্রামে ছিল না আপৎকালীন অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা ৷ ৪৫ কিলোমিটার দূরে কলকাতায় গুরুতর অসুস্থ রোগী নিয়ে যাওয়ার ঝামেলা কতটা, সেটা জানেন ভুক্তভোগীরাই ৷
২০০৪ সালে ট্যাক্সিচালক সহিদুল লস্করের বোন আঠারো বছরের মারুফা বিনা চিকিৎসাতেই মারা গিয়েছিলেন৷ বোনের এই অকাল মৃত্যুই সহিদুলকে হাসপাতাল তৈরির দিকে এগিয়ে দিয়েছিল৷ সহিদুল বলেন, ‘‘বোনের মতো আর কাউকে যাতে এভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে না হয়, সে ব্যবস্থা করতে গ্রামে হাসপাতাল গড়ে তোলাটা দরকার, যেখানে বিনামূল্যে মিলবে স্বাস্থ্য পরিষেবা৷'
![]() |
| মারুফা স্মৃতি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন |
![]() |
| ট্যাক্সি চালক সহিদুল লস্কর |
সহিদুলের পাশে প্রথম থেকেই দাঁড়িয়েছেন তাঁর স্ত্রী শামিমা লস্কর৷ তিনি স্বামীর এমন কাজে যুক্ত হতে পেরে গর্বিত৷ চোদ্দ বছর আগে স্বামী যখন এমন বিপুল কর্মকাণ্ডের কথা তাঁকে বলেছিলেন, তিনি অবাক হয়েছিলেন৷ তবে অসম্মত হননি৷ স্বচ্ছলতার চিন্তা না করে নিজের গয়না দিয়ে দিয়েছিলেন এমনকি একমাত্র শিশুপুত্রের নামে এলআইসি’র টাকাও ভেঙে ফেলেছিলেন এই মহৎ কাজে ৷ সহিদুল বলেন, ‘‘আমি স্ত্রী-কে বলি, যতদিন আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে, ততদিন অন্তত দু'বেলা খাবারের অভাব হবে না ৷ এই ভরসাতেই আমার স্ত্রী এগিয়ে এসেছিলেন৷'' শামিমা বলেন, ‘‘আজ আমার অলংকারের শখ নেই ৷ বরং আমাদের ক্ষুদ্র সামর্থের মধ্যে মানুষের জন্য কিছু করতে পেরে ভালো লাগছে৷ আমার রোগীদের আমি নিজের হাতে সেবা করতে চাই৷
![]() |
| সহিদুলের স্ত্রী শামীমা লস্কর |
এখন অনেক মানুষ সাহায্য করেন৷ তাতে আরো অনুপ্রাণিত হচ্ছি৷'' হাসপাতালে বয়স্কদের জন্য বিশেষ পরিষেবা রেখেছেন সহিদুল৷ এসবের মধ্যেই ধীরে ধীরে ৫০ শয্যার হাসপাতালের কাজ শেষ করেছেন তিনি৷ অনেকের সহায়তায় গড়ে উঠেছে ‘মারুফা স্মৃতি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন'৷ এখন আউটডোর ট্রিটমেন্ট পরিষেবার পাশাপাশি ইসিজি, চক্ষু চিকিৎসার কাজও শুরু হয়েছে সহিদুলের এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে তিনজন ডাক্তার ও তিনজন নার্স ও পর্যাপ্ত ওষুধ নিয়ে হেল্থ ক্যাম্পের কার্যক্রমও শুরু করতে চলেছে ‘মারুফা স্মৃতি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন'। কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের কর্ণধাররাও সাধ্যমতো সহায়তা করেন সহিদুলের এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে৷ আজকের দিনে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার বিপুল খরচ, সেসব মাথায় রেখে সহিদুল লস্কর যেভাবে এ কাজে এগিয়ে এসেছেন, তাতে আমরা আশাবাদী ভবিষ্যতে সাহিদুলের এই স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র এ রাজ্যের তো বটেই, গোটা দেশের কাছে একটি বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে৷ তবে এখনো অনেক ফান্ডিং লাগবে৷ কারণ, ডাক্তার, নার্সসহ স্পেশালিস্টও লাগবে এখন হাসপাতালে৷ আরও অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবাও দরকার৷ প্রত্যন্ত গ্রামে গুরুতর রোগীদের জন্য অতিরিক্ত অ্যাম্বুলেন্স খুব দরকার৷''
সহিদুল জানেন তার এখনো অনেক কাজই বাকি৷ তাই হাসপাতালের ১২ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন দিল্লি৷ এটা অনেকটা রূপকথার মতোই ঘটেছে তাঁর জীবনে৷ দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং তাঁর প্রশংসা করেছেন রেডিওর অনুষ্ঠানে৷ সেই আমন্ত্রণে দিল্লিতে ‘মন কি বাত' অনুষ্ঠানে ট্যাক্সিচালক সহিদুল লস্কর পৌঁছে গিয়েছিলেন এই হাসপাতালের জন্য নতুন স্বপ্ন নিয়ে৷ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দেখা না হলেও দুরদর্শনের কেন্দ্রীয় অধিকর্তার হাতে তিনি তুলে দিয়েছেন ১২ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব৷ এখন প্রতীক্ষা রয়েছে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদানের৷
ভিডিও নির্মানঃ
Host: Koushik Chatterjee
Reporter: Pinakshi Chatterjee
Editing: Sanjoy Kr Dutta







COMMENTS