সঞ্জয় কুমার দত্ত, BONG 24: পুজো আসছে আসছে করে ঠাকুর বানানো থেকে শুরু করে আগমনীর আগমনীবার্তা নিয়ে হাজির হয় মহালয়ার পবিত্রক্ষণ। পিতৃপ...
সঞ্জয় কুমার দত্ত, BONG 24: পুজো আসছে আসছে করে ঠাকুর বানানো থেকে শুরু করে আগমনীর আগমনীবার্তা নিয়ে হাজির হয় মহালয়ার পবিত্রক্ষণ। পিতৃপক্ষ থেকে দেবীপক্ষ - মানে পুজো বাঙালীর দরজায়। ওই দিন থেকেই তোড়জোড় শুরু হয় ঠাকুর আনতে যাওয়ার । পাড়ার দাদা, বন্ধুবান্ধবরা,সব গাড়ি সাজায় ঠাকুর আনতে যাবে বলে। পাড়ার ছোট ছোট শিশুগুলো মায়ের কাছে বায়না ধরে ঠাকুর আনতে যাবে বলে। কিন্তু কিছুতে'ই সে অনুমতি না মেলায় ছল'ছল চোখে ঠাকুর আনতে যাওয়া গাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে । পাড়ার ছেলেরা সবাই রাতের দিকে হই হই করে ঠাকুর আনতে চলে যায়, তখন ওই ফাঁকা মন্ডপে দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ির দিকে চলতে চলতে ছেলেবেলার পুজোর দিনগুলোর কথা মনের কোণে উঁকি দিতে থাকে।
ANSP Trust এর কার্যক্রমে প্রতিবছরই পুজোয় নতুন জামা আর শীতকালে শীতবস্ত্র আর কম্বল বিতরণ থাকে অবধারিত। এবার পুজোর মহাদ্বিতীয়ার শুভদিনে ( ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০২২) ছিল চাকদহের PBW ইঁটভাটা ও মুকুন্দনগর ইঁটভাটার শিশু ও নারীদের জন্য পুজোর বস্ত্র বিতরণ উৎসব । সারাটিদিন ANSP Trust এর সদস্যরা কাটিয়েছে নতুন জামা পাওয়া আনন্দমুখর ওই ক্ষুদে ক্ষুদে শিশুগুলোর আনন্দঘন এক দুপুরের স্বাক্ষী হয়ে।
আবহাওয়া দপ্তরের পুর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী এবার পুজো (১লা অক্টোবর থেকে ৫ই অক্টোবর) কাটবে ঘোর দুর্যোগে (যদিও আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের আবহাওয়ার পুর্বাভাষ মাঝেমধ্যে উল্টোটাই হয়)। রীতা দি খবর দিল সমীর রায় নামে আমাদের এক শুভাকাঙ্খী বন্ধু নবমীর বিকেলে (৪ঠা অক্টোবর ২০২২) ইঁটভাটার শিশুদের পুজোর ভোজ খাওয়াতে চান। আবহাওয়ার পুর্বাভাষকে পাত্তা না দিয়েই কথা দিয়ে দিলাম সমীর দাকে। নির্ধারিত দিনে কোন দুর্যোগ ছাড়াই সন্ধ্যে নাগাদ আমরা হাজির হয়ে গেলাম চাকদহের মুকুন্দনগর ইঁটভাটায়।
ইঁটভাটার শিশুরা হুল্লোড় করতে করতে হাজির হয়ে গেল আমাদের কাছে, ওদের হাসিমাখা মুখগুলো দেখে আমাদের পুজোর আনন্দ যেন ষোলকলা পূর্ণ হয়ে গেল। সেদিন আয়োজনে ছিল পোলাও, আলুর দম, কলা, আপেল । সবচেয়ে বড় কথা সমীর দা’র মত মানুষগুলো আছে বলেই হয়তো এই দুঃস্থ নারী ও শিশুগুলো একটু হলেও পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে পারে। মহানবমীর শুভদিনে এই ক্ষুদে শিশুগুলোকে এমন সুন্দর একটি অনুষ্ঠান উপহার দেয়ার জন্য ANSP Trust পরিবারের পক্ষ থেকে সমীর দা কে জানাই শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
৫ই অক্টোবর ২০২২ অর্থাৎ দশমী’র দিনে ছিল ছোট্ট মেয়ে প্রিয়াংশির জন্মদিন। প্রতিবছর এই দিনটি প্রিয়াংশি আর ওর পরিবার দুঃস্থ শিশুদের সাথে উৎযাপন করে। এ বছরও তার ব্যাতিক্রম নেই, এবারে প্রিয়াংশি তার জন্মদিন উৎযাপন করলো ANSP Trust পরিবারের ক্ষুদে শিশুদের সাথে। সঙ্গে ছিলেন প্রিয়াংশির বাবা মা আর দাদু। ইঁটভাটার ছোট্ট শিশুগুলোর সাথে আনন্দ আর হৈহুল্লোড়ে কাটলো প্রিয়াংশির সারাটি দিন। এমন ব্যাতিক্রমী উৎযাপনের ভাবনা সব মানুষের আসে না, আর এলেও ইচ্ছে থাকে না।
প্রিয়াংশি'র বাবা মায়ের মত প্রতিটি পরিবার যদি এমন ভাবেই নিজেদের আনন্দ উৎসবগুলো পালন করতো তবে হয়তো ওই দুঃস্থ শিশুগুলো সপ্তাহে দু একটি দিন এইরকম অনাবিল আনন্দে ডুব দিতে পারতো। ANSP Trust পরিবারের পক্ষ থেকে প্রিয়াংশিকে জানাই জন্মদিনের অনেক আদর ও ভালবাসা। আর প্রিয়াংশির পরিবারকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ এই আনন্দ উৎসব এই ক্ষুদে শিশুগুলোর সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্যে।
প্রিয়াংশির জন্মদিনের আনন্দের রোমন্থন করতে করতে মনে পড়ে গেল কাল ছিল বাঙালীর বিচ্ছেদের বিজয়া । বাপের বাড়ি থেকে কাল ছিল মা উমার যাত্রা । দেবী বাপের বাড়ির ছুটি কাটিয়ে পাড়ি দেবেন কৈলাসে৷ আনন্দে উচ্ছ্বাসে মিশেছে বিষণ্ণতার সুর৷ সকাল থেকে মন্ডপে মন্ডপে দেবী বরণের প্রস্তুতি চলেছে - হয়েছে ঘট বিসর্জন। দুপুর থেকেই পাড়ায় পাড়ায় মেয়ে-বৌ'রা মেতেছিল সিঁদুরখেলায়। এরপর গঙ্গার ঘাটে মা-কে বিদায় জানানোর পালা। কোলাকুলি আর শুভেচ্ছা বিনিময়, মিষ্টিমুখ৷ হাসি মুখে মাকে বিদায় জানিয়ে আরও একটা বছরের অপেক্ষা ৷
পুজো আসে পুজো যায়। সব সচ্ছল বাঙালীই তাদের সামর্থ অনুযায়ী পালন করে আনন্দের সকল উৎসব আর অনুষ্ঠান। আসুন না এই উৎসবগুলো থেকে সামান্য একটু ইচ্ছে আর সহযোগিতাকে এক করে এই দুঃস্থ মানুষগুলোর পাশে এসে দাঁড়াই।
সবাই ভাল থাকুন। সুখ আর সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক সবার জীবন।

COMMENTS